গত চার মাসে অব্যহতভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ১২২ দিনে মোট ২৪ বার পণ্যটির দাম ওঠানামা করেছে। এই সময়ে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩২শ কোটি টাকা। চার মাসে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। আর গত এক মাসে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এ সঙ্কটের সমাধানে সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস)।
পেঁয়াজের মূল্য সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন আজ রোববার (৩ নভেম্বর) সিসিএস এর পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে (কনফারেন্স লাইঞ্জ) বেলা ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিসিএস এর নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন সিসিএস এর গবেষণা দলের সমন্বয়ক জয়ন্ত কৃষ্ণ জয় ও শরিফুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে পলাশ মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি খুচরা বাচারে পেঁয়াজের মূল্য কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০ থেকে ৬০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। যা দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম। কোথাও কোথাও পেঁয়াজ এখন ‘হালি’ দরে বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচেছ। মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে এখন পেঁয়াজ দুর্লভ পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে অকল্পনীয়হারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত চার মাস আগে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ঈদুল আজহার এক মাস আগে, জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। তখন সরবরাহ ও আমদানী স্বাভাবিক থাকলেও এক দিনেই কেজি প্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে (১২২ দিন) মোট ২৪ বার পেঁয়াজের মূল্য ওঠা-নামা করেছে।
পেঁয়াজের মূল্যের এই ওঠা-নামার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে মন্তব্য করে পলাশ মাহমুদ বলেন, গত চার মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট কাজ করছে। চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের ১৩ সদস্যকে চিহ্নিত করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা ভোক্তাকে হতাশ, ব্যাথিত ও ক্ষুব্ধ করে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরবরাহ সঙ্কট ও আমদানী খরচের যে কারণ দেখানো হচ্ছে সে বিষয়ে সিসিএস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ দ’ুটি যুক্তিই শুধুমাত্র অজুহাত ও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার কৌশল। কারণ, ঈদুল আজহার এক মাস আগে কোথাও সরবরাহ ঘাটতি ছিল না এবং আমদানী খরচ বেশি ছিল না। শুধুমাত্র ঈদকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা অব্যহতভাবে দাম বাড়াতে থাকে। যা এখন ভোক্তার নাভিশ্বাস পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও পরে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়। এক দিনেই বর্ধিত দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসা সম্ভব নয়। এর পরপরই ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে সর্বত্রই এখনো ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হয় পেঁয়াজের সরবরাহ যথেষ্ট ছিল এবং আছে।
অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই উল্লেখ করে সিসিএস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে বছরে ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর দুই তৃতীয়াংশ বা ১৬ লাখ মেট্রিক টনের চাহিদা দেশি পেঁয়াজে পূরণ হয়। কোনো দেশ রপ্তানি বন্ধ করলে দেশি পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার বা কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতও প্রযোজ্য নয়। ফলে সরবরাহ কম ও আমদানী খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করে শত শত কোটি হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পলাশ মাহমুদ।
তিনি বলেন, গত ২ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সিেিন্ডকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোয় গত চার মাসে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে তিন হাজার একশত উনাশি কোটি ছত্রিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে তিনশত সাতানব্বই কোটি সাতষট্টি লাখ, আগস্ট মাসে চারশত একানব্বই কোটি তিতাল্লিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে আটশত পঁচিশ কোটি ছাব্বিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার এবং অক্টোবর মাসে চৌদ্দশত ছৌষট্টি কোটি নিরানব্বই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, চার মাসে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। চার মাসে মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। আর গত এক মাসের হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি দিন প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয় নেয়া হচ্ছে।
পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তার পাশাপাশি সরকারও ক্ষতিগ্রস্থ হচেছ মন্তব্য করে পলাশ মাহমুদ বলেন, সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মতো বিষয়ে যে সুনাম তৈরি হচ্ছে তা এই মূল্য সিেিন্ডকেট বা মূল্য সন্ত্রাসীদের কারণে ¤øান হয়ে যাচ্ছে। সেকারণে, সিন্ডিকেটের হাত থেকে ভোক্তাকে মুক্ত করে সরকারের অগ্রযাত্রা ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে ৪টি দাবি জানানো হয়।
বার্তা প্রেরক
জয়ন্ত কৃষ্ণ জয়
কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও আউটরিস সম্পাদক
কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি)।
মোবা: ০১৯৭৭৪৫৩৬৫৩
Our Locations 106/A, Green Road, Farmgate
Dhaka, Bangladesh
02 666 222
019 000 0000
info@ccsbd.net
106/A, Green Road, Farmgate
Dhaka, Bangladesh
02 666 222
019 000 0000
info@ccsbd.net
Design and Developed by